ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

জামায়াতের নতুন আমির মকবুল আহমাদ

সারাদেশে জামায়াতের ৩৭ হাজার রুকন সদস্যের গোপন ভোটে আমির নির্বাচিত হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্বে থাকা মকবুল আহমাদ।
খুব শিগগিরই জামায়াতের নবনির্বাচিত আমিরের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। এতে প্রায় ছয় বছর ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্বে থাকা মকবুল আহমাদই আমীর হচ্ছেন এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন দলটির প্রচার শাখার দায়িত্বশীল সূত্র।
দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের গোপন ভোটের ভিত্তিতে এই শীর্ষ পদটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে ওই সূত্র জানায়।
মকবুল আহমাদ জামায়াতের নায়েবে আমির ছিলেন। ২০১০ সালে আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ গ্রেপ্তার হলে ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পান তিনি। ওই সময় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হন এটিএম আজহারুল ইসলাম। তবে ২০১১ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর এটিএম আজহারুল ইসলাম গ্রেপ্তার হলে দায়িত্ব নেন ডা. শফিকুর রহমান।
২০১২ সালে শফিকুর রহমান গ্রেপ্তার হলে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হন ঢাকা মহানগর আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। শফিকুর রহমান জামিনে মুক্তি পেলে মাওলানা রফিক স্বপদে ফিরে যান।
দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর নানা চড়াই উৎরাইয়ে ভারপ্রাপ্ত আমীর, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল জামায়াতের হাল ধরে আছেন মকবুল আহমাদ। আত্মগোপনে থেকে বক্তৃতা-বিবৃতিসহ নানা মাধ্যমে দল পরিচালনা করছেন।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ার পর দল পুনর্গঠনের দাবি জোরদার হয়। এ পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের মাধ্যমে তিন সদস্যের আমীর প্যানেলের নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। এতে ২৭৭ সদস্যের মজলিশে শূরার সর্বোচ্চ ভোটে মকবুল আহমাদের নাম চূড়ান্ত ভাবে বিবেচিত হয়।
তবে দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গোপন ভোটের মাধ্যমে এই শীর্ষ পদটি চূড়ান্ত করেন রুকন সদস্যরা। এ কারণে আমীর প্যানেলে আরো দুজনের নাম থাকায় গঠনতন্ত্রের আলোকে আমীর পদের চূড়ান্ত নির্বাচনের জন্য ৪২ হাজার রুকনের ভোট নেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ জন্য গোপনে রোকনদের কাছে ব্যালট পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে আমীর নির্বাচনে রুকনদের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এতে প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানায়।
গৃহীত ভোটে সত্তরোর্ধ মকবুল আহমাদ ৯০ ভাগের বেশি ভোট পেয়েছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে কৌশলগত কারণে উদ্ধৃত হতে চাননি কেউ।
জামায়াতের এক তরুণ সদস্যের মতে, দলের এই সংকটময় মুহূর্তে সার্বিক বিবেচনায় মকবুল আহমাদের বিকল্প নেই। একইভাবে সেক্রেটারি জেনারেল পদে ডা. শফিকুর রহমানই সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। মকবুল আহমাদ আমীর নির্বাচিত হলে ডা. শফিকুর রহমান সেক্রেটারি জেনারেল হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক। বিগত ছয় বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত আমীর হিসেবে মকবুল আহমাদ দায়িত্ব পালন করছেন।
পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি ছিলেন প্রথমে এটিএম আজহারুল ইসলাম, পরবর্তীতে ডা. শফিকুর রহমান। দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর দুজনেই আত্মগোপনে থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
আমীর নির্বাচনে সারা দেশে ৮৩টি সাংগঠনিক জেলায় প্রায় ৩৭ হাজার রুকন সদস্য ভোট কার্যক্রমে অংশ নেয়।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিক নতুন আমীরের নাম ঘোষণা করা হবে।
এদিকে নতুন আমীরের শপথ নেয়ার পর প্রথমে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা নির্বাচন হবে। পর্যায়ক্রমে সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, বিভাগীয় সেক্রেটারি নির্বাচন হবে। শূরা নির্বাচনের পাশাপাশি জেলা ও মহানগরী আমীর নির্বাচনও সম্পন্ন হবে বলে সূত্র জানায়।

পাঠকের মতামত: